সোহেল হোসেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: বঙ্গপোসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় সোমবার দিনব্যাপী ঝড়ো হাওয়া বইছে। এতে নদীতে জোয়ারের তীব্র স্রোত ও ভাটার টানে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলে। দিনব্যাপী পুরো জেলায় মাঝারি আকারের বৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় মানুষের কস্ট বেড়েছে। আশ্রয়নকেন্দ্রে আশানুরূপ মানুষ আসেনি। গবাদিপশু চুরির ভয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়তে অনাগ্রহ চরের বাসিন্দাদের। বিদ্যুৎ না থাকায় আশ্রয়ণের জন্য মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই দিকে দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা সহ -ভোলা-বরিশাল নৌরুটে সকল ধরণের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে এনে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।

কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, নাসিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে নদী শান্ত ছিল। বৃষ্টির কারণে হাট-বাজারে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। নদী তীরবর্তী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না। মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তর পশ্চিম চরমার্টিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কেউ আসেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কমলনগরের আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন আসেনি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় ৭নং বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য মাইকিং করেছেন।

মজুচৌধুরীর হাট ফেরী ঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম বলেন, আবহাওয়া অফিস ও উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ফেরী চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়া পর্যন্ত ফেরী চলাচল বন্ধ থাকবে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মানুষজন আসা শুরু করেছে। আলোর জন্য মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরবরাহের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, উপজেলার চর আবদুল্লাহ মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন। সেখানে প্রায় ৪০-৫০ টি পরিবার রয়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন। মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয়ন কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, দুর্গম চর থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। নদী এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের জন্য পানি উন্নয়নবোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

প্রসঙ্গত, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নদী বেষ্টিত। এ চার টি উপজেলার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করতে সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারসহ ১৮৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন ব্যয়ের জন্য ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২৬০ মেট্টিক টিন চাল মজুদ রয়েছে। ১এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৬০০ প্যাকেট বিস্কুট ইতিমধ্যে উপজেলা ভিত্তিক বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬৬ টি মেডিকেল টিমের সঙ্গে সরকারি এম্বুলেন্সগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩ তিন হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক ইতিমধ্যে মাঠে কাজ করছেন। জেলা ও উপজেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত কর্মস্থল এলাকায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।